ঢাকা,শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

চকরিয়ায় বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::   চকরিয়ায় উপজেলার বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারের নানা অনিয়ম দূর্ণীতি ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে সেচ্চাচারিতার অভিযোগ এনে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগের অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও প্রেরণ করা হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক ক্যাটাগরির সদস্য আব্দুল মাবুদ বাদি হয়ে গত ২৪ আগস্ট এ অভিযোগ দায়ের করেন।

চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত আবুল হোসেনের পুত্র ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক ক্যাটাগরির সদস্য আব্দুল মাবুদ বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করা লিখিত অভিযোগে দাবী করেন, বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে সীমাহীন দূর্ণীতি, কোচিং বানিজ্য ও অনৈতিকভাবে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে টাকা আতœসাত করে আসছেন।

বর্তমান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠনের পর থেকে তিনি কোন কিছুর হিসাব নিকাশ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে দেননি। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পুরণের সময়, জেএসসি পরীক্ষার নম্বর ফর্দ প্রদানের সময় এবং বিভিন্ন শ্রেণীতে পাশ করা শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র প্রদানের সময় অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় রেজুলেশন গঠনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষককে বারবার সতর্ক করা হলেও কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না তিনি। বিগত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আমলে প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে ৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা তুলে খরচ করে ফেলেন। এ ব্যাপারে ওই সময় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারকে টাকা জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলেও বিষয়টি তিনি আমলে নেননি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুল মাবুদ আরও অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ে নতুন ভবন এনে দেয়ার নামে দুই লাখ টাকা আতœসাতের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের স্মাট কার্ড দেয়ার নামে আরো এক লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছন প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার। শিক্ষার্থীদের এখনো পর্যন্ত কোন স্মাট কার্ড বিতরণ করা হয়নি। আব্দুল মাবুদ দাবী করেন, প্রধান শিক্ষকের এ অনৈতিক কাজের ব্যাপারে আমি যথাসাধ্য প্রতিবাদ ও বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলেও বিদ্যালয়ের কিছু কুচক্রি শিক্ষকদের ইন্দনে তিনি দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনেরও হুমকি দেন প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার।

অভিযোগ লিপিতে আব্দুল মাবুদ দাবী করেন, সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গত কয়েকদিন পূর্বে শুরু হওয়া নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের ফি’র নামে প্রতিজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৯৩০ টাকা করে জমা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার। করোনার এ মহামারী দূর্যোগে অবর্ণণীয় দূর্ভোগে দিনাতিপাত করা স্থাণীয় বেশকিছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে আমাকে অভিহিত করলে এ ব্যাপারে আমি জোর প্রতিবাদ করি। এসময় আমি পার্শবর্তী বিদ্যালয়ে মতো রেজিস্ট্রেশন ফি নেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করলে তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে নাজেহাল করার পাশাপাশি আমাকে দেখে নেয়ার হুমকী দেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুল মাবুদ তার লিখিত অভিযোগে দাবী করেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার কোন দিনই ঠিক সময়ে স্কুলে আসেননা। ১২টা থেকে ১টার মধ্যে তিনি বিদ্যালয়ে আসলেও দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে তিনি আবার চলে যান। তিনি আরো দাবী করেন, এক সময় বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয় একটি খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু বর্তমান প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে বিদ্যালয়ের নিয়ম শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ার কারণে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহি এ প্রতিষ্ঠানটি তার সুনাম হারাতে বসেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারের লাগামহীন এ অনিয়ম দূর্ণীতির ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে এ অভিযোগ করেন বলে দাবী করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুল মাবুদ।

তবে অভিযোগের ব্যাপারে বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার বলেন, নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদৈর বোর্ড রেজিস্ট্রেশন শুরু হওয়ার পর বিদ্যালয়ের হিসাব রক্ষক মাস্টার ইলিয়াছ বকেয়া বেতন ও রেজিস্ট্রেশন ফি’সহ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৯৩০ টাকা করে আদায় করতে চাইলে পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বাঁধা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মার্চ মাস পর্যন্ত বকেয়া বেতন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ফি ও রেজিস্ট্রেশন ফি মিলিয়ে ১০৩০ টাকা করে আদায় করা হয়। তারপরও কমিটির পক্ষ থেকে এ টাকা আদায়ের ব্যাপারে প্রতিবাদ আসলে বর্তমানে শুধু রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৪৩০টাকা করে নেওয়া হয়।

প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের মাসিক ফি আদায়ের ব্যাপারে আমি পরিচালনা কমিটির সভাপতি, শিক্ষানুরাগী সদস্য ও অন্যান্য সদস্যদের ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তাঁরা একটি মিটিং ডাকার পরামর্শ দেন। তখন আমি বিষয়টি অন্যান্য সদস্যদের জানানোর পর অভিভাবক সদস্য আব্দুল মাবুদকে জানানোর জন্য ফোন করলে তাৎক্ষনাত তিনি আমার সাথে অশ্লিল ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন। তখন আমি তার ফোনটি কেটে দিই। আমার বিরুদ্ধে আনা অন্যান্য অভিযোগও ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। বিভিন্ন দপ্তরে নয় সয়ং প্রধান মন্ত্রীর দপ্তরে অভিযোগ করলেও কোন লাভ হবেনা। কারণ সব অভিযোগের জবাব আমার কাছে গচ্ছিত রয়েছে।

পাঠকের মতামত: